durbar

১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর নৃশংস হামলা

সন্ত্রাসী হামলায় ১৫০+ শিক্ষার্থী আহত

প্রাণনাশের চেষ্টা

বিচার চাই

প্রমাণ দেখুন
show image
show image
show image
show image
show image
show image
show image
show image
show image
show image
show image
show image
show image
show image

কী ঘটেছিল?

১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ - বিএনপি ও ছাত্রদল জোরপূর্বক ছাত্র রাজনীতি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে কুয়েট ক্যাম্পাসে সশস্ত্র হামলা চালায়। নিরীহশিক্ষার্থীদের ওপর পিস্তল, লোহার রড, ধারালো অস্ত্র, লাঠি ও ইট-পাটকেল দিয়ে বর্বর আক্রমণ করা হয়।

Banner Image
১৫০+ শিক্ষার্থী গুরুতর আহত, অনেকেই হাসপাতালে ভর্তি
শান্তিপূর্ণ ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি চাপিয়ে দেওয়ার পরিকল্পিত প্রচেষ্টা
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ কুয়েট প্রশাসন
ন্যায়বিচারের দাবিতে ফুঁসে উঠেছে কুয়েটের শিক্ষার্থীরা

কুয়েটকে রাজনীতি মুক্ত রাখতে হবে । দোষীদের কঠোর শাস্তি চাই

প্রমাণ দেখুন

ঘটনার সময়রেখা

দুপুর ১:০০ ছাত্রদল কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি প্রবেশ করানোর চেষ্টার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা পূর্বঘোষিত শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিল শুরু করে। মিছিলটি সকল হল ঘুরে ইউআরপি ভবনের পাশ দিয়ে প্রশাসনিক ভবনের দিকে অগ্রসর হয়।

timeline Image

ইউআরপি ভবনের পাশে পৌঁছালে বিপরীত দিক থেকে আসা ছাত্রদলের কর্মীরা মিছিল অতিক্রমের সময় অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও উসকানিমূলক মন্তব্য করে। এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। কিছু সিনিয়রকে লক্ষ্য করে ছাত্রদলের কর্মীরা আক্রমণাত্মকভাবে তেড়ে আসে, ফলে পরিস্থিতি ঘোলাটে হয়ে যায়। সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়।

timeline Image

শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয় এবং ভিসি স্যারের সাথে দেখা করার দাবি জানায়।

তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেয়— যতক্ষণ পর্যন্ত ছাত্র রাজনীতির সাথে যুক্ত চিহ্নিত শিক্ষার্থীদের বহিষ্কার করা না হবে, তারা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবে।

timeline Image

পকেট গেটে ২১ ব্যাচের এক শিক্ষার্থীকে ছাত্রদলের কর্মীরা নির্মমভাবে মারধর করে। আহত শিক্ষার্থীকে প্রশাসনিক ভবনে আনা হলে আগত শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে স্লোগান দিতে শুরু করে— “ভিসি কোথায়? ভিসি কোথায়?

timeline Image

পকেট গেটের বাইরে থেকে ছাত্রদলের কর্মীরা ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করলে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাস রক্ষায় পকেট গেটের দিকে ছুটে যায়। সন্ত্রাসীরা পকেট গেট থেকে সরে সাতক্ষীরা বেকারি রোডে অবস্থান নেয়।

timeline Image

শিক্ষার্থীদেরকে সাথে নিয়ে প্রো-ভিসি স্যার মধ্যস্থতার চেষ্টা করলে সন্ত্রাসীরা তার উপরও হামলা চালায়। আহত শিক্ষার্থীর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। সন্ত্রাসীরা খান জাহান আলী হলের অসম্পূর্ণ নির্মিত দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকে বহু শিক্ষার্থীকে নির্মমভাবে আঘাত করে।

timeline Image

বিপুলসংখ্যক বহিরাগত কুয়েট মেইন গেট দিয়ে প্রবেশ করে এবং শিক্ষার্থীদের উপর পুনরায় আক্রমণ চালায়। কিছু সন্ত্রাসী মেইন গেটের পাশে ভবনের ছাদে উঠে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে থাকে। ক্যাম্পাস এক রণক্ষেত্রে পরিণত হয়।

timeline Image

শিক্ষার্থীরা সাহসিকতার সঙ্গে ক্যাম্পাসের নিয়ন্ত্রণ পুনরুদ্ধার করে। এরপরে ধীরে ধীরে নিরব দর্শক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে।

সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে ছয় দফা দাবি উপস্থাপন করা হয়, মূল দাবিগুলোর মধ্যে ছিল— হামলাকারীদের শাস্তির ব্যবস্থা করা এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হওয়ার দায় স্বীকার করে ভিসি, প্রো-ভিসি এবং পরিচালক (ছাত্রকল্যাণ) পদত্যাগ করা।

timeline Image

ভাইয়ের রক্তের ৬ দফা

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষার্থী, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও অধীনস্থ সকলে কুয়েটের সাথে সংযুক্ত থাকা অবস্থায় কুয়েটের ভেতরে এবং বাইরে কোনো প্রকার রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে যুক্ত থাকতে পারবে না—এটি উল্লেখ করে অধ্যাদেশ জারি করতে হবে। এর ব্যত্যয় ঘটলে শাস্তি হিসেবে অত্র বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের জন্য আজীবন বহিষ্কার এবং শিক্ষার্থীদের জন্য ছাত্রত্ব বাতিলের বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে।
১৮.০২.২০২৫ তারিখে কুয়েটে শিক্ষার্থীদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলার ঘটনায় জড়িত শিক্ষার্থী এবং এদের প্রশ্রয়দাতা শিক্ষক, কর্মচারী, ও কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কুয়েট প্রশাসন থেকে হত্যা চেষ্টা ও নাশকতার মামলা করতে হবে এবং জড়িত সকলকে বহিষ্কার ও ছাত্রত্ব বাতিল করতে হবে। জড়িতদের তালিকা শিক্ষার্থীরা প্রদান করবে।
১৮.০২.২০২৫ থেকে আগামী ২৮.০২.২০২৫ তারিখ পর্যন্ত কুয়েটে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা প্রদানের লক্ষ্যে কুয়েট ক্যাম্পাসের বাইরে পর্যাপ্ত সংখ্যক সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সহায়তায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
১৮.০২.২০২৫ তারিখের ঘটনায় আহত সকলের চিকিৎসা সংক্রান্ত ব্যয়ভার কুয়েট প্রশাসন বহন করতে হবে। আহতদের তালিকা শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে প্রদান করা হবে।
১৮.০২.২০২৫ তারিখের ঘটনায় ছাত্রদল এবং স্থানীয় বিএনপি কর্তৃক কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করা হয়েছে—এই মর্মে কুয়েট প্রশাসন থেকে বিবৃতি দিতে হবে।
উপরোক্ত সকল দাবি পূরণ করে, উক্ত ঘটনার ব্যর্থতার দায় স্বীকার করে, নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনার সাথে সাথে ভিসি, প্রো-ভিসি এবং পরিচালক (ছাত্রকল্যাণ) কে পদত্যাগ করতে হবে
Banner Image

১৯ ফেব্রুয়ারী

১৯ ফেব্রুয়ারির সকালে সকল শিক্ষার্থী কুয়েট মেডিকেল সেন্টারের সামনে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। দুপুর ১২ টায় শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক ভবনের প্রবেশপথে তালা লাগিয়ে দেয়। ১৮ ফেব্রুয়ারির হামলার পর শিক্ষার্থীদের দেওয়া ছয় দফা সম্পূর্ণরূপে মেনে নেওয়ার জন্য দুপুর ১টা পর্যন্ত সময় দেওয়া হয়েছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে দাবি মেনে না নেওয়ায়, বিকাল ৪টায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা ভিসিকে বর্জন করার ঘোষণা দেয়।

timeline Image

রাতে কুয়েট ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদী গ্রাফিতি আঁকা হয়, যেখানে ১৮ ফেব্রুয়ারির নৃশংস হামলার বিরুদ্ধে শক্তিশালী বার্তা ফুটে ওঠে। পাশাপাশি, ‘দুর্বার বাংলা’ প্রাঙ্গণে শিক্ষার্থীরা মোমবাতি প্রজ্বলন কর্মসূচি পালন করে, যা এক প্রতীকী প্রতিবাদ হিসেবে ঐক্য ও প্রতিরোধের বার্তা দেয়।

timeline Image

২০ ফেব্রুয়ারী

সকাল ১১টায় শিক্ষার্থীরা কুয়েট ক্যাম্পাসে এক অনন্য প্রতিবাদী কর্মসূচির মাধ্যমে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে। ব্যর্থ প্রশাসন, সন্ত্রাসী হামলা এবং সকল প্রকার রাজনীতির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীরা লাল কার্ড প্রদর্শন কর্মসূচি পালন করে।

timeline Image

বিকালে Student Welfare Centre (SWC) ভবনে আয়োজিত হয় ‘রক্তাক্ত কুয়েট ১৮.০২.২৫’ নামে একটি বিশেষ আলোকচিত্র প্রদর্শনী। এই প্রদর্শনীতে ১৮ ফেব্রুয়ারির নৃশংস হামলার ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়, যা উপস্থিত সকলকে সেই বিভীষিকাময় ঘটনার স্মরণ করিয়ে দেয়।

timeline Image

রাতে ১৮ ফেব্রুয়ারির বর্বর হামলার ওপর তৈরি বিশেষ ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। এই ডকুমেন্টারির মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা সেদিনের নির্মমতা, হামলাকারীদের পরিকল্পিত আক্রমণ এবং ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা বিশদভাবে তুলে ধরে।

timeline Image

২১ ফেব্রুয়ারি

একুশে ফেব্রুয়ারির প্রথম প্রহরে কুয়েটের সকল শিক্ষার্থী একত্রিত হয়ে ক্যাম্পাসের শহীদ মিনারে ভাষা শহীদদের স্মরণে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে। দেশের জন্য আত্মত্যাগ করা বীরদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শিক্ষার্থীরা এক অভিন্ন কণ্ঠে স্বাধীনতা, ন্যায়বিচার ও শিক্ষাঙ্গনের শান্তির পক্ষে অবস্থান নেয়।

timeline Image

রাত ৮টায় শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসজুড়ে প্রতিবাদ মিছিল বের করে, যেখানে ১৮ ফেব্রুয়ারির নৃশংস হামলা, প্রশাসনের ব্যর্থতা এবং ক্যাম্পাসে সকল প্রকার রাজনীতির বিরুদ্ধে জোরালো স্লোগান ওঠে।

মিছিল শেষে শিক্ষার্থীরা ভিসির বাসভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়, প্রশাসনের প্রতি তাদের চূড়ান্ত অসন্তোষ ও অনাস্থার প্রতীক হিসেবে। এই পদক্ষেপ ছিল শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি প্রশাসনের উদাসীনতার সরাসরি জবাব।

timeline Image

২২ ফেব্রুয়ারি

ক্যাম্পাসে সংঘটিত সন্ত্রাসী হামলার মূল হোতাদের মুখোশ উন্মোচন করতে সন্ত্রাসীদের ছবি ও পরিচয়সহ পোস্টার সম্পূর্ণ ক্যাম্পাসজুড়ে লাগানো হয়।

এই পোস্টারিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা হামলাকারীদের চিহ্নিত করে প্রশাসন ও দেশবাসীর সামনে উপস্থাপন করে।

timeline Image

২৩ ফেব্রুয়ারি

ক্যাম্পাসে নিরাপত্তাহীনতার অনুভূতি চরমে পৌঁছালে সকল শিক্ষার্থী মাথায় লাল কাপড় বেঁধে প্রতীকী প্রতিবাদ জানায়।

সকাল ৬টায় তারা ক্যাম্পাস ত্যাগ করে ঢাকার উদ্দেশ্যে যাত্রা করে, যেখানে কুয়েটের শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান উপদেষ্টার একান্ত সচিবের নিকটে স্মারকলিপি জমা দেয়

timeline Image

প্রধান উপদেষ্টার একান্ত সচিব সাব্বির আহমেদের কাছে স্মারকলিপি জমা দেওয়ার পর, ঢাকা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শিক্ষার্থীরা প্রেস ব্রিফিং আয়োজন করে

এই প্রেস ব্রিফিংয়ে ১৮ ফেব্রুয়ারির হামলার প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা হয় এবং দেশের জনগণের সামনে আন্দোলনের ন্যায্যতা ও শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো স্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা হয়।

timeline Image

রক্তাক্ত কুয়েট, ২০২৫