১২ই সেপ্টেম্বর ২০২২,
আমি জাহিদুর রহমান, আমার সাথে ঘঠে যাওয়া এক নির্মমতাকে আপনাদের কাছে তুলে ধরছি।
**ছাত্রলীগের করা অভিযোগ এ কুয়েট প্রশাসনের করা মামলায় আমি ৩ মাস আগে সম্পূর্ণ নির্দোষ প্রমাণিত হয়ে মামলা থেকে নিষ্পত্তি পাই*
* এখানে যে নামগুলো দেয়া আছে তারা সবাই-ই প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে এ ঘটনার সাথে জড়িত। আমি পরবর্তী পোস্টে এদের সম্পর্কে আরও নির্মম সত্য আপনাদের সামনে তুলে ধরবো।
* সাদমান নাহিয়ান সেজান
রায়হান আহম্মেদ - ১৭১৯০৫৮ LE 17
সাজেদুল করিম বাপ্পি - ১৬০১০৭৭ CE 16
ফখরুল ইসলাম ফারিস - ১৭২৩০৪৮ BECM 17
LE 18
আদনান রাফি -১৮১৯০৫৯
রেজওয়ান ইসলাম রিজভী - ১৮১৯০৩৭
মোস্তাক আহমেদ তুষার - ১৮১৯০৪৭
সিরাজুম মনি রুপক - ১৮১৯০৩৮
TE 18
মেহেদী হাসান মিঠু - ১৮২১০৩৯
ফুয়াদুজ্জামান ফাহিম - ১৮২১০৫৩
সাফাত মোরশেদ - ১৮২১০৪৮
ফারিয়ার জামিল নিহাল - ১৮০১১২০. CE 18 (ও আমাকে মারেনি কিন্তু পরোক্ষভাবে জড়িত
হল প্রভোস্ট হামিদুল ইসলাম স্যার (BECM)
সহকারী হল প্রভোস্ট -সুনন্দ দাস(CSE)
DSW Director - ইসমাইল সাইফুল্লাহ স্যার (CE)
Security Incharge - সাদেক হোসেন প্রামাণিক (কুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি নয়ন এর আপন বড় ভাই)
আমি,পার্থ আসরের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যাচ্ছিলাম।তখন হলের সামনে LE 18 এর আদনান রাফির সাথে দেখা সে পার্থর কাছে জানতে চায় আমরা কই যাচ্ছি। পার্থ বলে তারপর বলে নামাজের পর আমরা তার সাথে দেখা করতে।
নামাজ পড়ে এসে আমরা টিটি রুমে রাফির জন্য অপেক্ষা করি। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর রাফি না আমাতে আমি রুমে চলে চাই। ১২ই সেপ্টেম্বর সেদিন ছিল আমাদের ২-২ এর প্রথম দিন ।আমি রাফ খাতা থেকে নোট গুলো বিষয় ভিত্তিক নোট খাতায় সাজাচ্ছিলাম।১০-১৫ মিনিট পর ১৮ এর LE ১৮ এর রাফি, রিজভী ও রূপক এবং TE 18 এর সাফাত, ফুয়াদ, মিঠু আসে আমার রুমে।আমাকে জিজ্ঞেস করে পার্থ কই। আমি ওরে টিটি রুম থেকে ডাকতে যাই।এর মধ্যে ও চলে আসে। ওরে নিয়ে ১১৫ নং রুমের সামনে যাই। আমাকে রুমের বাহিরে রেখে ওরা পার্থর(১১৫ নং রুম রশিদ হল) রুমে ঢুকে সবাই।
কিছুক্ষণ পর পার্থকে বের করে দিয়ে আমাকে ডাকে ।এরপর সেখানে যারা ছিল তাদের সবার পরিচয় জানতে চায়। যাকে যাকে চিনি তাদের পরিচয় বলি। তখন সবাইকে চিনতাম ও না।
এরপর আমাকে জিজ্ঞাসা শুরু করে আমি হলে উঠলাম কিভাবে পলিটিক্যাল কাউকে না জানিয়ে। আর আমি একা একা কেন থাকি হলের কারও সাথে মিশিনা কেন রুম থেকে বের হইনা কেন। এই বিষয় এ জিজ্ঞেস শুরু করে । আমি হলে উঠিই ২-১ সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার কয়েকদিন আগে পিএলের মধ্যে পরীক্ষার মধ্যে পড়াশুনার ব্যস্ততার কারণে তেমন কারও সাথে মেশাও হতোনা। পরীক্ষার মধ্যেও হলের নানান কলে মিছিলে মিটিং এ ডাকাডাকি করত সম্ভবত ২/৩ বার গেছিলাম (রুম থেকে ধরে নিয়ে যাইত বলা গেলে)। যার জন্য ওদের নজরে চলে আসি। এবং অন্যদেরকে বলেও যে এরকম হলে রুম তালা মেরে দিবে। ১৯ ব্যাচ এর পলিটিকাল ১১৩/১১৪ নং রুম একবার তালা মরে দিছিল একদিন বিকালের ঐ রুমের কেউ মিছিলে না থাকায়। হল থেকে ১১৭ নং রুমের সবাইকে বের করে দিবে। আর তাছাড়া কোভিডের মধ্যে এলাকায় ফুটবল মাঠে দূর্ঘটনায় আমার বাম চোখের ওপরের হাড় ভেঙে যায় হাড় ভেঙে চোখের মধ্যে চলে আসে কিছুটা এবং চোখের ওপরে দেখতে গর্তের মতো হয়ে যায় দেখতে খারাপ লাগত।তাই আমি চুল বড় করে কপালের উপরে রাখতাম চুল। এই দূর্ঘটনায় আমার রাইট ফ্রন্টাল সাইনাস ওপেন হয়ে যায় এর আগে থেকেই সাইনাসের ও ফটোফবিয়ার সমস্যা ছিল দূর্ঘটনার পর যেটা আরও বেড়ে যায়।( ফটোফবিয়ার সমস্যার আমি সব সময় ফটোসান গ্লাস ব্যবহার করি ) ফটোসান/ব্লুকার্ড গ্লাস ছাড়া খালি চোখে আলোর মধ্যে আসলেই প্রচন্ড মাথা ব্যাথা শুরু ও চোখের কোটরে ব্যাথা শুরু হয়ে যায়। সূর্যের আলোর উপস্থিতিতে আমার বেশি সমস্যা হয়। যার জন্য আমি বাসায় বা রুমে থাকলে সব সময় দরজা জানালা বন্ধ করে রাখি।বাহিরেও খুব একটা বের হওয়া হতোনা তখন। আমার যে চোখের ওপরের হাড় ভাঙা আমার অপারেশন করানো দরকার অর্থনৈতিক সমস্যা তো আছেই আর চোখের ওপরের অপারেশন করা জটিল হবে আর ঝুকিপূর্ণ। তাই ডাক্তাররা ২ বছর অপেক্ষা করতে বলছে এর মধ্যে হাড় ঠিক না হলে পরবর্তীতে তখন স্বীদ্ধান্ত নিবে। আমি তাদের কে এই বিষয় গুলো বলি।
কিন্তু তারা বলে না অন্য কারণ আছে তাদের কাছে খবর আছে আমি শিবির করি। আমি বলি না আমি শিবির করি না। তারপর আমাকে হুমকি দিতে থাকে আমার সাথে কে কে আছে আর কুয়েটে এবং আমি শিবির করি এই সীকারক্তি দিতে তাহলে আমাকে ছেড়ে দিবে না হয় আমার থেকে স্বীকার কী করে নিতে হবে সেটা ওরা করবে।আমি বারবারই অস্বীকার করি।তারপর ওরা আমাকে মাগরিব পর্যন্ত সময় দেয় এর মধ্যে না স্বীকার করলে আমার থেকে শিবির করি স্বীকার না করে আমাকে ছাড়বেনা। আমি তখনও বুঝতে পারছিলাম না যে আজ কিছুক্ষণ পর কি হতে যাচ্ছে আমার সাথে। এর মধ্যে ওরা রুমে স্টাম্প, প্লাস্টিকের এস এস পাইপ, ও রড নিয়ে আসে। আমি এর মধ্যে মাগরিবের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যেতে চাই। কিন্তু ওদের শর্ত হল নামাজ পড়লে রুমের মধ্যেই পড়তে হবে বাহির এ বের হতে দিবেনা। আসরের নামাজ পড়ার অজু থাকাতে আমি রুমেই নামাজ পড়ি।
কিছুক্ষন পর ওরা আবার আসে এবং স্টাম্প, এস এস পাইপ৷ ও রড আসে ওরা আমাকে মারার জন্য রেডি এবং আবার জিজ্ঞাসা শুরু করে। আমি এবার অস্বীকার করা মাত্রই ওরা আমার ওপর একসাথে হামলে পরে।সবার আগে রাফি আর রিজভী আমার পায়ে মারা শুরু করে স্টাম্প দিয়ে। আমাকে ওরা ওদের মাঝখানে রেখে রাফি,রিজভী, মিঠু,ফুয়াদ,সাফাত আমার চারপাশে হায়েনাদের মতো ঘিরে যে যার মতো আমার কোমড়ের নিচে থেকে পায়ে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে মারতে থাকে কেউ স্টাম্প কেউ পাইপ দিয়ে আমার মা-বাবা সহ ফ্যামিলির মানুষ দের যে যেভাবে পারে অশ্রাব্য ভাষায় গালিও দিতে থেকে।এভাবে কতসময় মারে আমার খেয়াল নেই তারপর আবার বন্ধ করে আবার জিজ্ঞেস শুরু করে অস্বীকার করা মাত্রই আবার ওদের মার শুরু হয়। স্টাম্প, পাইপ,ঘুষি, থাপ্পড়, লাথি যে যেভাবে পারে ইচ্ছে মত জানোয়ার গুলো আমাকে মারে।আমাকে সবচেয়ে বেশি আঘাত করতে থাকে। যতটা পারতাম হাত দিয়ে ওদের স্টাম্পের আর পাইপের বাড়ি গুলো ঠেকানোর জন্য। আমি এর মধ্যে নানান কসম কেটে ওদের বললাম যে আমি কোন সংগঠন এর সাথে জড়িত ও না শিবির ও করিনা। ওরা তথন রুম থেকে বের হয়ে ওদের সাথের আরেক জন রুপক কে রেখে যায় আমার সাথে কথা বলে স্বীকারোক্তি নেওয়ার জন্য। আরও এতক্ষণ বসেই ছিল আমাকে মারেনি একবারও। ও আমাকে বলে যে স্বীকার হইতে আমি শিবির করি কেউ আর কিছুই করবেনা। আমি ওরে বলি ভাই আমি কোন সংগঠন এর সাথেই জড়িত না আপনি আমাকে এদের হাত থেকে বাচান।ও বলল ভাই তুই আমাকে মাফ করে দিস আমার কিছু করার নাই । এভাবে কিছুক্ষণ ও কথা বলার পর ওরা সবাই আবার আসে।
আবার আমাকে এই ৫জন একই সাথে মারা শুরু করে। আমি যতটা পারি ওদের স্টাম্প আর পাইপের বাড়ি হাত দিয়ে ঠেকাতে।প্রত্যেকটা বাড়ি হাতে লাগলে মনে হত এখনই হাতটা ভেঙে যাচ্ছে। এভাবে মারতে থাকে আর স্বীকার করতে বলে আমি শিবির করি।োরা
এর মধ্যে আবার নতুন অভিযোগ বের করে ওরা আমাকে এত মারতেছে আমি কান্না করতেছিনা ওদের কাছে কোন কাকুতি মিনতি করছিনা আমি নরমাল কেউ না। এজন্য আরও বেশি টর্চার করতে থাকে। আার পায়ের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে গেলে ফ্লোরে বসে পরি।। তখন আমাকে ফ্লোরে শোয়াই দেয়। এর মধ্যে BECM এর ফারিজ এসে দেখে যায় ও এমন ভাবে তাকাই আছে যেন আমাকে পারেনা মেরে ফেলে। ও কিছুক্ষণ থেকে চলে যায়। জোর করে আবার দাড় করাই পায়ে মারতে থাকে আমার পায়ের অবস্থা খুবই খারাপ হয়ে গেলে আমি আবার ফ্লোরে বসে পরি।তখন পা ফেটে রক্ত ও বের হচ্ছিল। আমি বলি দেখেন আমি যদি দশিবির করতাম আপনারা এত মারদছেন আমার পা থেকে রক্ত বের হচ্ছে আমিত স্বীকার করতামই। ওরা বিশ্বস করেনা। আবার রূপক কে৷ বলে যায় জিজ্ঞেস করতে।আমি আমার জায়গায় অনড় ছিলাম।রূপকের সাথে কথা গুড়িয়ে সময় নষ্ট করার চেষ্টা করছিলাম যেন ওরা আসতে দেরি করে।
আবার আসে ওরা আর আমাকে আর দাড় করাতে পারছেনা দেখে এবার ফ্লোরে শোয়াই মারতে থাকে।ওরা এখন কেউ আমার পা ধরে রেখে পায়ের তলায় মারতে থাকে স্টাম্প দিয়ে। আর যে যেভাবে পারে লাথি ঘুষি পাইপ দিয়ে কোমরে মারতে থাকে। অনেকক্ষণ মারার পর আমার অবস্থা খারাপ হয় দেখে ওরা বালতিতে করে পানি নিয়ে আসে। আমার মাথায় ও শরীরে পানি দেয়। যাতে আমি সেন্সলেস না হয়ে যাই। এরপর ওরা সবাই চলে যায় আবার ও একাই আমাকে জিজ্ঞেস শুরু করে। এবং আস্বস্ত করে স্বীকারোক্তি দিলে আমার কিছু হবে না আর।আমি আবার ও অস্বীকার করি। এবং আগের মতো কথা গুড়িয়ে সময় নষ্ট করার চেষ্টা করি আগের মতো।
তারপর ওরা সবাই আসে ও সাথে LE 17 এর রায়হান ও তূর্য আসে।ওরা আইসা এমন ভাবে কথা বলেছিল যেন ও কিছু জানেনা।দঅথছ ওদের নেতৃত্বে ১৮ ব্যাচ এর ছাত্রলীগ আমাকে মারে।ও আমাকে জিজ্ঞেস শুরু করে আমাকে কেন ধরছে কি সমস্যা এইসব আমি ওরে সব বললাম যে ভাই (ওর মতো কুলাঙ্গার জারজকে ভাই বলতে ঘৃণা লাগে) আমাকে শুধু শুধু মারতেছে আমার অবস্থা খারাপ আপনি আমাকে বাচান। ও তখন রশীদ হলের সমন্বয়ক ছিল। আমি ভাবছিলাম ও আমাকে বাচাবে।কিছুক্ষণ পর বুঝতে পারি ওরা সবাই একসাথে। ও আমাকে বলে তুমি ওদের জুনিয়র দেখে এখনো বেচে আছ ওরাত এখনো তোমাকে কিছুই করেনি। আমার নাকি কপাল ভালো ওদের ইমিডিয়েট জুনিয়র হলে ওদের হাতে পরলে এতক্ষণে মারা যাইতাম। পরে ১৮ ব্যাচকে ও রাগ করে ওরা কি করতেছে এখনো আমার থেকে কথা বের করতে পারছেনা কেন।আমাকে ছাদের সাথে উল্টো করে ঝুলানর কথা বলে যায়।আর কারেন্ট এর শক দিতে দরকার হলে। এজন্য তারও আনে রুমে। পরে অবশ্য কারেন্ট এর শক দেয়নি। আর৷ রায়হান তূর্য বলে যায় এবার যদি ওদের কাছে স্বীকার না যাই এরপর কী অবস্থা হবে তা কল্পনা করতে পারবনা। ও চলে যায় আবারও আমাকে ওরা মারতে থাকে। আমি চিল্লাচ্ছি বাহির থেকে শব্দ শোনা যায় দেখে ওরা রুমে বক্স নিয়ে আসে হাই ভলিউম এ গান বাজাচ্ছে যাতে আর বাহিরে আমার চিল্লানোর শব্দ না যায়।এবার আমাকে মারতেছে ৩/৪ জন করে মারে ওরা ক্লান্ত হয়ে গেলে পানি ও সিগারেট খায় আবার অন্য ৩/৪ জন আসে। এভাবে কতবার মারে খেয়াল নেই। এতক্ষণ ধরে রাফি,রিজভী,সাফোয়াত,মিঠু,ফুয়াদ ও ফাহিম মারে রায়হান যাওয়ার পর ওদের সাথে তুষার আসে। এবং এরা ৬ জনই মারে ৩/৪ গ্রুপ করে। ১
আমার যতটুকু সেই বীভৎস রাতের কথা মনে পরে রিজভী আর রাফি এত বেশি শক্তি দিয়ে মারে এই ২টা মিলেই আমার বাম পায়ের ওপরে ৩টা স্টাম্প ভাঙে। শুধু রিজভীর হাতেই ২টা স্টাম্প ভাঙ্গে। ওদের মারের ধরন দেখে আমার মনে হইছিল যে আজ আর হয়তো জীবিত থাকবোনা।বারবার আবরার ভাইর কথা মনে পড়িতেছিল আর উপলব্ধি করছিলাম কতটা নিষ্ঠুরভাবে ভাই কে মারা হইছিল। মা -বাবা,ভাই বোনের কথা মনে পড়তেছিল।
ওরা বলতেছিল সমস্যা নাই তুই মারা গেলেত শহীদ হবি। আর তোর আল্লাহ রে ডাক তোর আল্লাহ তোরে বাচাইব।ওরা আমাকে এলোপাতাড়ি যেভাবে ইচ্ছে লাথি ঘুষি স্টাম্প দিয়ে মারিতেছিল আর বলতেছিলো তুই কেরে এত মাইর একটা গরুকে মারলেও ও সব স্বীকার করত কিন্তু তুই এত শক্ত কি করে।এ জন্য ওরা আরও ক্ষেপে। ওরা যতই মারত আমি আল্লাহ কে মা-বাবা কে বাচার শেষ আকুতিভরা মনে ডেকে যাচ্ছি এছাড়া আর মাঝে মাঝে ওদের কাছে আকুতি জানাচ্ছিলাম ভাই আমিত আপনাদের ধর্মের ভাই আমাকে আর মাইরেন না ।আমি মরে যাব ভাই। আমার কোন আকুতিই সেদিন ওদের মন গলাতে পারেনি। ১
এরপর আবার রায়হান তূর্য আসে চেয়ারে বসে ওরা আবার সেই একই কথা জিজ্ঞাসা শুরু। আমি ওর পায়ে ধর আর বলি ভাই আপনি আমাকে বাচান না হলে ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।ওর কথা একটাই ওরা যা বলে স্বীকার করে নেও তোমার আর কিছুই হবেনা। তূর্য ও আমাকে একই কথা বোঝাতে থাকে স্বীকার করতে আর কারা আছে তাদের নাম বলতে । আমি আমার মতো অনড় ছিলাম। আমার তখন মনে হচ্ছিল আমিত শিবিরের সাথে জড়িত না যদিও আমি এদের নির্যাতন থেকে বাচার জন্য স্বীকার করি আর মন ইচ্ছে মতো কারও নাম বলে দিই ওরাত তারে ধরে এনেও একই নৃশংস অত্যাচার করবে।যতো যাই হোক আমি মরে গেলেও এদের কোন কথাই মানবোনা।আমার নিজের বাচার জন্য কারোর শুধু শুধু ক্ষতি করবোনা। আজ বাচি মরি যা আল্লাহ ভাগ্যে রাখছে।
এবার রায়হান চেয়ার থেকে উঠে আমাকে ওর সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে এলোপাথাড়ি লাথি দিতে থাকে। আমার প্রায় ভাঙা পায়ে আমি যন্ত্রণায় পাগল প্রায়। চিল্লাতে থাকি জোরে জোরে ওরা বক্সের সাউন্ড আরো বাড়ায় যাতে বাহির থেকে কেউ শব্দ না পায়।এরপর ও আবার প্লাস্টিকের এস এস পাইপ দিয়ে আমার পায়ে পিঠে মারতে থাকে ও আর বলতে থাকে আমি নাকি ওর ১৮ ব্যাচ এর জুনিয়র দের নামে ওর কাছে বিচার দিয়ে ওদের কে অপমানিত করছি।আর আমার মা বোন তুলে ইচ্ছে মতো গালি দিতে থাকে। অনেক্ক্ষণ নির্মম ভাবে মারার পর ও চলে যায়। ও যাওয়ারর পর সাফওয়াত আবার পানি নিয়ে আসে আমার মাথায় পানি দেয়। রিজভী ডাইনিং থেকে খাবার নিয়ে আসে।আমি খাইতে অস্বীকার করি কারণ হাতে এত ব্যাথা আর যন্ত্রণা যে নিজ হাতে খাইতে পারবো ।আমার ২ হাতেরই অবস্থা তখন খুবই খারাপ হাতে এত স্টাম্পের আর পাইপের বাড়ি লাগছে কোন কিছুই আর ধরতে পারছিলাম না।রিজভী তখন খাইয়ে দেয়। খাওনার ওরা আমাকে কি কি যেন ঔষধ খাওয়ায়। আমি তখন যা বুঝছিলাম যাতে সেন্সলেস না হই এজন্য হয়তো ঔষধ খাওয়াচ্ছে। এতক্ষণ ধরে শুরু থেকেই ওরা আমাকে খেয়াল করেই কোমড় থেকে নিচে আর হাতেই বেশি মারত ।
1
এরপর ওরা রুম থেকে চলে গেলে পার্থ আসে রুমে। এতক্ষণ পার্থকে ওরা অন্য রুমে আটকে রাখে। পার্থ আমার অবস্থা দেখে ও কান্না করে দেয়। ও ভাবতেই পারেনি এতক্ষণ ধরে ওর রুমে ওর বন্ধু কে এক ওর পলিটিকাল ভাইরা মৃত প্রায় অবস্থা করে রাখছে। আমি ওরে আমার রক্তাক্ত পা দেখাই। ওদের স্টাম্প আর পাইপের আঘাতে পা পেটে রক্তে ট্রাউজার কিছু টা লাল হয়ে গেছে । আমার তখন পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ হয়ে যাওয়াতে বাহির এ মেসে থাকা কষ্ট হয় দেখে পার্থকে জানালে ও আমাকে হলে ওঠার পরামর্শ দেয় আর ও সব ম্যানেজ করে যার জন্য আমি ছাত্রলীগের হল কমিটির আর কারো সাথে কথা বলিনি। এজন্য ও আমার কাছে মাফ চায় তখনই। বলে ভাই আমি জানতামনা এরা যে এত জানোয়ার তুই আমাকে মাফ করে দিস। ও নিজেও হল ছাত্রলীগকে বোঝানর চেষ্টা করে যে আমি শিবির করিনা বা কোন কিছুর সাথে জড়িতো না।পরবর্তীতে জানতে পারি আমার পক্ষ নেওয়াতে ওরেও নাকি বলতেছে ও আমার সাথে জড়িত ও শিবির করে অথচ ও নিজেও তখন হল ছাত্রলীগের সাথে জড়িত। আমাকে যখন এত টর্চার করা হচ্ছিল আমিও বলেছিলাম যে আপনারা পার্থ কে জিজ্ঞেস করেন ও সব জানে আমার সম্পর্কে। ওরা বলতেছে আমি নাকি পার্থ কেও জড়াতে চাচ্ছি আমার সাথে। ওদের থেকে এধরনের কথা শুনার পর পার্থকে জড়িয়ে বা অন্য কাউকে জড়িয়ে নিজেকে নির্দোষ প্রমানিত করার জন্য আর কোন ব্যাচমেট বা কারও নাম নেইনি। কারণ ওরা আবার তাকেই সন্দেহ করবে।আমার মতো একই পরিস্থিতি তারও হতে পারে।পার্থ তখনও হল পলিটিক্স এর সাথে জড়িত (ওরে জোর করেই জড়িত করছে পলিটিক্স এ ২য় বর্ষের শুরু থেকেই পলিটিক্স ছেড়ে দিতে চাচ্ছে কিন্তু পলিটিকাল দের হুমকি আর পাশবিকতার ভয়ে পারেনি।আলহামদুলিল্লাহ পরে ও পলিটিক্স ছেড়ে দিছে।) হলে ওঠার পর আমি আর পার্থ ২জনই কয়েকদিন নিজেদের মধ্যে কথা বলছিলাম হল ছাড়ার বিষয় এ। হয়ত আর কয়েকদিনের মধ্যে ছেড়ে দিতাম সেই সুযোগ আর হয়নি।
আমাকে তখন ১১৫ নং রুম থেকে গেস্ট রুমে নিবে।ট্রাউজার রক্তাক্ত দেখে পার্থকে দিয়ে আমার রুম থেকে আমার আরেকটা ট্রাউজার আর শার্ট নিয়ে আসে বলে যায় আগের গুলো পরিবর্তন করতে।আমার অবস্থা খুবই খারাপ দাড়াতে ও পারছিনা হাত দিয়ে কিছু ধরতে পারছিনা আর। পরে আবার পার্থকে এনে আমার কাপড় পরিবর্তন করায়।পার্থ যখন আমার ট্রাউজার আর টি শার্ট খুলে তখন দেখতে পায় কতটা নির্মম নৃশংস ভাবে আমাকে টর্চার করা হয়। হাত পা ফুলে যায় আনেক এজন্য ট্রাউজার পরা যাচ্ছিলনা।অনেক কষ্টে পার্থ ট্রাউজার পরিয়ে দেয়। আর ওর চোখ দিয়ে পানি পরতেছিল।ও নির্বাকের মতো যেন কোন কথাই বলতে পারছিলনা আর।১
আমি হাটতে পারতেছিনা পায়ে ভর করে পরবর্তীতে সাফওয়াত আর ওর সাথের কে যেন আমাকে ধরে নিয়ে গেস্ট রুমে ফ্লোরে বসায়।তখন রাত ১০:৩০ এর পর হবে।সেখানে আগে থেকেই CE 1 5 এর বাপ্পি বসে আছে। আবার ও জিজ্ঞেস শুরু করে।ও আবার নতুন অভিযোগ নিয়ে আসে আমি নাকি ওদের বাপ মুজিব রে নিয়ে কটুক্তি করছি সন্ধ্যা থেকে এতক্ষণ পর্যন্ত ওদের অভিযোগ ছিল শিবির এখন আবার মুজিব।তারপর ও যা জিজ্ঞেস করছিল আমি আর উত্তর দেইনি। ও আমাকে ইচ্ছে মত মাথায় মুখে আঘাত করতে থাকে ওর হাত দিয়ে । আমি হার হাত দিয়ে নিজেকে তেমন একটা রক্ষা করতেও পারছিনা।হাতের অবস্থা হওয়ায় হাত নাড়াতেই কষ্ট হচ্ছিল । সন্ধ্যায় আমার চশমা ১১৫ নং রুমেই পরে যায়। ফটোফবিয়ার সমস্যা জনিত মাথা ব্যাথা সাইনাসের ব্যাথা সব এক সাথে মারের যন্ত্রণা মনে হচ্ছিল মারা যাচ্ছি। ১
এর মধ্যে হল প্রভোস্ট আসে DSW এর ডিরেক্টর আসে সিকিউরিটি ইনসার্জ সাদেক হোসেন প্রামাণিক আসে( কুয়েট এর সাবেক ছাত্রলীগের সভাপতি নয়নের আপন বড় ভাই)।
ওনারা হলের প্রোভস্ট রুমে অথছ ওনাদেরই উপস্থিত তে ছাত্রলীগের লাইসেন্স দারি সন্ত্রাসীরা গেস্ট রুমে কি নির্মম ভাবে মারতে মারতে মৃত প্রায়। আমি তখন ভাবছিলাম স্যাররা যেহেতু আসছে আমাকে উদ্ধার করবে। আর কোন নৃশংস টর্চার এর স্বীকার হবনা।কিন্তু ওনারা কেউ গেস্ট রুমে আসলনা আমাকে দেখতে বা উদ্ধার করতে ।ওরা যতক্ষণ ইচ্ছে মারল তারপর প্রভোস্ট এর রুমে নিয়ে গেল।সেখানে নেওয়ার পর ওদের নতুন অভিযোগ স্যারদের সামনে উপস্থাপন করল আমি নাকি ওদের মা হাসিনাকে নিয়ে কটুক্তি করছি কোথা থেকে স্ক্রিননশট নিয়ে আসছে। অথচ সন্ধ্যা থেকে এতক্ষণ মারল শিবির স্বীকারোক্তি নেওয়ার জন্য যেটা ওরা স্বীকারোক্তি না নিতে পেরে এখন আমার ওপর করা সকল টর্চার হাসিনাকে কেন কটুক্তি করলাম বলে জায়েজ করে নিল।(আমি হাসিনাকে নিয়ে কোন কটুক্তি করিনি কোর্ট থেকে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হইছি সব এভিডেন্স আমার কাছে আছে আর *আমি যদি করেও থাকি তাতে ওদের এই অধিকার কে দিল আমাকে টর্চার করার* )।প্রোভস্ট ডিএসডব্লিউ ডিরেক্টর স্যারকে বোঝাচ্ছে আমার কত বড় অপরাধ আরও কত কি! এর মধ্যে আবার কুয়েটের আরেক জানোয়ার কুখ্যাত সন্ত্রাস সেলিম স্যারের খুনি কে রায়হন ফোন করে জানায় জ*ঙ্গি ধরা পড়ছে রশীদ হলে। তাড়াতাড়ি আসতে। কুখ্যাত সন্ত্রাস ও খুনি সেজান তখন ক্যাম্পাসের বাহিরে ছিল। এর মধ্যে CE 18 এর নিহাল আসে আমি ওর কাছে রিকোয়েস্ট করি ভাই আমাকে বাচান। ওর জবাব ছিল না ভাই তুই যে অপরাধ করছচ তোরে কেউ বাচাতে পারবনা এরকম কিছু পুরোপুরি এখন মনে পরছেনা।
আমাকে যখন আসরের পর ধরে নিয়ে যায় তখন ফোনত ওরা রুমে নিয়ে যায় আর পরে আমার রুম থেকে ল্যাপটপ ও নিয়ে যায়। পরবর্তীতে আমার ফোন আমি নিহালের হাতে দেখতে পাই।ওই আমার ফোন ল্যাপটপ চেক করছিল আমার কাছে নিষিদ্ধ কোন বই বা কিছু আছে কিনা আমাকে জঙ্গি প্রমাণ করা যায় কিনা।কিছুক্ষণ পর সেজান আসে। ও আমাকে প্রভোস্ট রুম থেকে আবার গেস্ট রুমে নিতে চায়। আমি ইসমাইল সাইফুল্লাহ স্যারকে রিকোয়েস্ট করলাম স্যার আপনি আমাকে বাচান না হয় ওরা আমাকে মেরে ফেলবে।স্যার আমার কথা তো শুনলই না উনি রুম থেকে বের হয়ে গেল।আর বলল বাবা আমি পারবনা।
প্রভোস্ট স্যার বললো তোমরা সন্ধ্যা থেকে ওরে জিজ্ঞাসা করছই আর দরকার নেই আমরা পুলিশকে ফোন করছি পুলিশ এসে ওরে নিয়ে যাবে। তখন ও ওরা বলতেছিলো তুই শিবির করছ স্বীকার কর আর কিছু হবেনা পুলিশকেও দিবনা।আর না স্বীকার করলে পুলিশে দিব।
পরবর্তীতে সেজান সহ ওরা জোর করে আমাকে হল প্রভোস্ট এর রুম থেকে আবার গেস্ট রুমে নিয়ে যায়।
এর মধ্যে হল প্রভোস্ট অথবা ছাত্রলীগের কেউ ফোন করে তৎকালীন কলুষিত ছাত্ররাজনীতিরর পৃষ্ঠপোষক সদ্য পদত্যাগ করা ভিসি স্যার মিহির রন্জন স্যারকে জানায়। উনি একবার আসলও না যে কি হচ্ছে একবার অন্তত এসে দেখে যেতে পারত।যাইহোক ভিসি স্যার জানার পরও এবং প্রভোস্ট ও DSW স্যার উপস্থিত থাকার পরও আমাকে প্রভোস্ট রুম থেকে গেস্ট রুমে নিয়ে আরও নির্মম নৃশংস পাশবিক ভাবে নির্যাতন করে।
সেখানে আমাকে নেওয়ার পর সেজান বাপ্পি সহ ছাত্রলীগের অপরিচিত আরও ৩/৪ জন আসে ১৮ ব্যাচ এর ওরা সবাই থাকে সিনিয়র ওরা সবাই সোফায় বসে। আমারত দাড়ানোর মতো অবস্থা ছিলনা আমাকে ফ্লোরে বসায়।আবার একই জিজ্ঞাসাবাদ এবার আমাকে সাফাত আর রায়হান এস এস পাইপ দিয়ে মারতে থাকে আমার পিঠে মাথায় রানে ঘাড়ে আর সন্ত্রাসী জারজ রায়হান গালিগালাজ করতে থাকে আমি ওদের মা সৈরাচার হাসিনাকে নাকি কটুক্তি করছি। আমি এখন একেবারেই বোধ শক্তিহীন ওরা যে এত মারতেছে কোন কিছুই আর গায়ে লাগছেনা মনে হচ্ছে। কিছুক্ষণ পর আবার আমার ল্যাপটপ নিয়ে আসে। আমার রিকভারি ফাইল ফুল দেখাচ্ছে তবে সেখানে কোন ফাইল নেই। এখন ওদের সন্দেহ আমি কোন পাসওয়ার্ড সেট করে ফাইল সিক্রেট করে রাখছি এখানে ওদের পাসওয়ার্ড বলতাম।আমি জানিনা কেন এমন দেখাচ্ছে ।সেকেন্ড হ্যান্ড ল্যাপটপ কিনছিলাম। ওরা বিশ্বাস করেনা আমার কথা। টর্চারের মাত্রা আরও বাড়ায় তাও স্বীকার করছিনা দেখে সেজান ওদেরকে লোহার বা স্টিলের পাইপ নিয়ে আসতে বলে। সাফাত এগুলো না পেয়ে বাসার দরজার এঙ্গেল নিয়ে আসে। যেটা দিয়ে সেজান মারতে দেয় না। ওটা দিয়ে যদি মারা হত আমার পিঠের হাড় আর মেরুদণ্ড মনে হয় গুড়ি গুড়ি হয়ে যাইত।পরবর্তীতে প্লাস আনায়। আমার হাতের পায়ের নখ তুলার জন্য। আমি ঐদিন সকালেই নখ কাটছিলাম। নখ ধরা যাচ্ছিল না।তাই আবার হাতুড়ি নিয়ে আসে। হাতুড়ি দিয়ে আমার হাতের আঙুল কব্জি পায়ের গিরায় সেজান মারতে থাকে গোপন ফাইল বের করে দিতে। শিবির স্বীকারোক্তি দিতে। আর রায়হান তো পিঠে পাইপ দিয়ে ওর গায়ের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে মারতে থাকেই তখনও । হাতুড়ির আঘাতে হাত পা ফেটে আবার রক্ত বের হচ্ছে। এভাবে কতক্ষণ মারা হয় আমি জানিনা।এর মধ্যে পুরো সময় আমি ওদের কোন কথায় আর কোন উত্তর দেইনি।চুপ ছিলাম। পুলিশ আসতেছে শুনে ওরা আমাকে টর্চার করা অফ করে দিয়ে সিনিয়র গুলো বের হয়ে যায়। আর ১৮ ব্যাচ রে বলে যায় আমাকে প্রভোস্ট এর রুমে নিয়ে যাইতে।১৮ এর রাফি আর সাফাত আবার আমাকে এলোপাথাড়ি লাথি দিতে থাকে থাকে গায়ের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে।আমার পা ফুলে যাওয়ােত আর জুতা পরা যাচ্ছিলনা।খালি পায়েই আমাকে রশীদ হলের কর্মচারী সাদ্দাম ভাই আর CE 18 এর নিহাল কাধে করে ধরে নিয়ে যাচ্ছিল প্রভোস্ট রুমে। আমি মাটিতে পা রাখার মতো অবস্থা বা জোর আমার পায়ে আর নেই।এর মধ্যেও রাফি আমাকে পেছন থেকে লাথি ঘুষি দিতে থাকে।আমাকে প্রভোস্ট রুমে সোফায় বসানো হয়(জোরপূর্বক কারণ তখন আমার পা গুটিয়ে বসা খুবই কষ্টের ছিল ওরা আমাকে এভাবে বসিয়ে রাখার উদ্দেশ্য হল যাতে আমি স্বাভাবিক আছি পুলিশকে বোঝানোর জন্য)। প্রভোস্ট রুমে হল প্রভোস্ট, সহকারী হল প্রভোস্ট( সিএসই ডিপার্টমেন্টের লেকচারার সুনন্দ দাস ছিল)।আর ছাত্রলীগের কুয়েট শাখা ও রশীদ হলের জানোয়ার গুলো ছিল। আমি ওদেরকেন অনুরোধ করলাম ভাই আপনারা আমাকে দরকার হলে একটা রুমে আটকে রাখেন কয়েকদিন আপনারা আমার ফোন আর ল্যাপটপ ও পর্যবেক্ষণ দেখেন আমার সাথে কারা যোগাযোগ করে বা আমি গোপন কোন কিছ বা শিবিরের সাথে জড়িত কিনা।আমাকে মামলা দিয়ে পুলিশের হাতে দিয়েন না। তারা বলে না তুই পুলিশের কাছে প্রমাণ করিস।আমি প্রভোস্ট স্যার DSW এর ডিরেক্টর স্যারকে রিকোয়েস্ট করি স্যার আপনি আমাকে বাচান পুলিশ এ দিয়েনা। আপনিত জানেন আমার সম্পর্কে ।মামলা দিয়েন না আমার নামে আমার পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো না। অনেক অনুরোধ করা স্বত্বেও প্রশাসনিক এই লোক গুলোর আমার পক্ষে একটা শব্দ ও বলেনি।যদি ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা ওদের বিরুদ্ধে চলে যায় এই ভয়ে হয়ত।
আমি কোন ভাবেই ওনাদের কনভিন্স করতে পারছিনা দেখে বললাম আপনারা আমাকে ছেড়ে দেন আমি আর কখনোই কুয়েটে পড়তে আসবনা সব ছেড়ে চলে যাব। তবুও আমার নামে মামলা দিয়ে আমাকে জেল এ পাঠাইয়েন না। আমার মা-বাবা পরিবার জানতে পারলে তারা বাচবেনা। আমার পারিবারিক অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ আমাকে তারা জেল থেকে ছাড়াতে পারবেনা। সেদিন কোন আকুতি আর কারও মন গলাতে পারেনি আমার জন্য।
ইসমাইল সাইফুল্লাহ স্যার জানত সবই ।তবুও স্যার সন্ত্রাসীদের ভয়ে চুপ ছিল কোন কথা বলেনি। আরও উনি আমাকে জিজ্ঞেস করে গোপন সংগঠন থেকে আমি মাসে কত টাকা পাই। স্যারের এই কথা শুনে আমি নির্বাক।
সুনন্দ দাস স্যার আমার ল্যাপটপ নিয়ে নেয় ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের কাছ থেকে।এবং উনি খুজতে থাকে আমার ল্যাপটপের প্রতিটা ফোল্ডার আমাকে আর কোন ভাবে পাশানো যায় কিনা। ওনার ব্যবহার এতই বাজে ছিল যে উনি পারেনা আমাকে মারে প্রভোস্ট রুমের ছাত্রলীগের ভূমিকায় উনি একাই পালন করতেছে।এরপর রুমে কি হচ্ছে আমার আর কোন কথাই ছিলনা ছাত্রলীগের নির্মমতা, নৃশংসতা ও পাশবিকতায় আর প্রসাশনের ভূমিকা দেখে আমি নিশ্চুপে দেখে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই করার ছিলনা। যারা আমার নিরাপত্তা দিবে তারাই আমার বিরুদ্ধে আমাকে দোষী বানাচ্ছে কুয়েট এর তৎকালীন এই মেরুদন্ডহীন প্রসাশন। তখন ভাবতে লাগলাম জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল আমার কুয়েটে পড়তে। হয়ত আজ এসবই ভূলের মাশুল। এর মধ্যে খান জাহান আলী থানা থেকে ৩/৪ জন পুলিশ প্রভোস্ট রুমে আসে। পুলিশ আসার পর প্রভোস্ট স্যার পুলিশকে ইনফর্ম করে আমি শেখ হাসিনাকে নিয়ে কটুক্তি করছি, শিবির করি আমি নিষিদ্ধ কোন সংগঠন এর সাথে জড়িত আর ছাত্রলীগের দেওয়া প্রিন্টেড কিছু মেসেজ হল প্রভোস্ট পুলিশকে দেখায়। পুলিশ দেখে বলে এসবযে ওর মেসেজ এর প্রমাণই বা এই অভিযোগে তারা আমাকে এরেস্ট করতে পারবে না। একথা শোনার পর সেজান আর হল প্রভোস্ট হামিদুর রহমান সহকারী হল প্রভোস্ট সুনন্দ দাস ঐ পুলিশের সাথে বাক বিতন্ডায় জড়ায়।তারা ঐ পুলিশের ওপর গরম হয়ে যায়। ছাত্রলীগ আর সেখানে উপস্থিত কুয়েট প্রশাসনের কথা আমরা আপনাদের কে অভিযোগ করছি আপনারা আইনের লোক আপনারা থানায় নিয়ে তদন্ত করে প্রমাণ করবেন। আপনারা কেন এধরনের কথা বলবেন। এভাবে বাকবিতণ্ডা চলার পর ঐ সাব-ইন্সপেক্টর বলে শুনেন ধার্মিক হলে আর দাড়ি রাখলেই যদি কেউ শিবির হয়ে যায় তাহলে ক্যাম্পাসের মসজিদ মন্দির যা আছে সব ভেঙে দেন কেউ আর ধার্মিক ও হবেনা আর শিবির করবেনা।
পুলিশ প্রভোস্ট রুমে প্রবেশ করার পর এতক্ষণ ধরে আমি কোন অভিযোগ বা কোন কিছুই পুলিশকে জানাইনি। সন্ধ্যা থেকে আমাকে ছাত্রলীগের জানোয়ার রূপী সন্ত্রাস গুলো কতটা নৃশংস ভাবে নির্যাতন করেছে । তারপর পুলিশ এর মধ্যে কেউ একজন খেয়াল করে আমার মুখে রক্তের দাগ । তখন আমাকে জিজ্ঞেস করল ওনারা মুখে রক্ত কেন।
। তারপর আমি ওনাকে বললাম স্যার আমার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ । আমাকে মাগরিবের পর থেকে আপনারা আসার আগ পর্যন্ত অমানবিক ভাবে নির্যাতন করেছে ছাত্রলীগের এরা। এর মধ্যে তখন কুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সেজান বলে স্যার ও ভং ধরছে ওরে জাস্ট জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য পোলাপান চড় থাপ্পড় দিছে। অবশ্য এই জানোয়ার খুনির কাছে এই টর্চার কিছুই না।
ঐখানে যে সিনিয়র সাব-ইন্সপেক্টর ছিলেন উনি আমার কাছে আসেন আমাকে দাড়ানোর জন্য বলে। আমি ওনাদের কে জানাইলাম স্যার আমার পায়ের অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। আমার পক্ষে দাড়ানো সম্ভব না। পরবর্তীতে উনি আমার ট্রাউজার হাটু পর্যন্ত উঠায় এবং ছবি তুলে। গায়ের শার্ট খুলে পিঠের, হাতের ছবি তুলে। ওনারা আমার অবস্থা দেখে আমাকে থানায় নিতে অস্বীকার করে। কোন মতেই আমাকে নিবেনা।খান জাহান আলি থানার ওসি স্যারকে ফোন দিয়ে আমার অবস্থা জানায় যে স্যার ছাত্ররা ওরে অনেক টর্চার করছে ওর অবস্থা খুবই খারাপ ।আমার প্রায় পুরো শরীর কালো হয়ে গেছে আমাকে থানায় নিয়ে গেলে কোন ধরনের দূর্ঘটনার সম্মুখীন হলে পুলিশ দায়ী হবে। ওসি স্যার সব শুনে নিষেধ করে দেয় আমাকে থানায় নেওয়ার জন্য।
আর ওসি স্যার কে ছবি পাঠিয়ে দেয়। আমাকে কেন নিবেনা এসব নিয়ে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী গুলো হল প্রভোস্ট হামিদুল ইসলাম ও সহকারী হল প্রভোস্ট সুনন্দ দাস পুলিশের সাথে অনেক জোড়াজুড়ি করে। তারপরও তাদেরকে রাজি করাতে পারেনি। ওনারা কোন মতেই আমাকে থানায় নিবেনা বা এরেস্ট করবেনা। তাদেরকে কোন ভাবেই রাজি না করাতে পেরে প্রশাসন আমাকে কুয়েটের এম্বুলেন্স দিয়ে এরেস্ট না করে পুলিশের হেফাজতে ২ জন পুলিশ ও রশীদ হলের সিকিউরিটি গার্ড সহ খুলনা মেডিকেল কলেজ এ পাঠায় চিকিৎসার জন্য। পুলিশ সাথে করে প্রিজন ভ্যান নিয়ে আসছিলো যেটা অডিটোরিয়াম এর সামনে রাখা ছিল। আরও পুলিশের সদস্যরা ছিল গাড়িতে। পরবর্তীতে তারা প্রিজন ভ্যান এ বাকি পুলিশ দের নিয়ে থানায় ফেরত যায়।
হসপিটালে প্রায় রাত ২টার পর পৌছাই। আমাকে প্রিজন সেলে নেওয়া হলো। কিছুক্ষণ পর প্রিজন সেলে কর্তব্যরত ডাক্তার আসল। উনি এসে আমার অবস্থা দেখল হাতের পালস সহ স্বাভাবিক কিছু চেক করল। আমার কাছে জানতে চাইল কি হইছে আমি সংক্ষেপে ওনাকে বললাম।শার্ট খুলে দেখল এবং পায়ের অবস্থা দেখল। পরে উনি আমাকে সরাসরি বললো দেখ তোমার শারীরিক অবস্থা খারাপ এখন এখানে তোমার সাথে কেউ নেই অনেক বেশি টর্চার করার ফলে তোমার শরীরের রক্ত কালো হয়ে গেছে। তুমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করো যে তুমি এখন ও বেচে আছ।তোমার জাস্ট প্রাণ টা আছে বাহির দেখে দেখে যা মনে হচ্ছে । এখন ভেঙে পরলে হবেনা তোমাকে বেচে থাকতে হবে।কালো ব্লাড কিডনিতে জমাট হয়ে গেলে কিডনি ব্লক করে পুরোপুরি ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে।কিডনি ড্যামেজ হয়ে গেলে মারা যাইতে ও পার। এজন্য আমাকে একটানা স্যালাইনের ওপর রাখতে হবে। আর উনি আমাকে পরামর্শ দেয় প্রচুর পরিমাণ এ পানি পান করতে হবে যাতে স্যালাইন আর পানি পান করার ফলে কালো ব্লাড এর পরিমানটা একসাথে পরিশোধন হওয়ার পরিমাণ টা পানির সাথে কমে যায়। কালো ব্লাড একসাথে বেশি গেলে কিডনিতে জমাট হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। বেশি পানি পান করলে আর স্লাইনের কারণে ধীরে ধীরে কালো ব্লাডের পরিমাণটা কমে রক্ত স্বাভাবিক হয়ে যাবে। এইরকম ওনার মতো উনি বলল ল এখন আমার যটা মনে পরে।
তারপর হসপিটাল থেকে স্লাইন নিয়ে আমার হাতে স্যালাইন সংযোগ করে দিয়ে কিছু ঔষধ দিয়ে ডাক্তার চলে যায়।
আমার সাথে দেওয়া কুয়েট এর সিকিউরিটি গার্ড রুটি,কলা আর পানি কিনে দিয়ে উনিও বিদায় নেয় ।