৮ ই মার্চ ২০২৪
র্যাগ ব্যাচের কালচারাল নাইট ছিলো। আমাদের প্রথম সেমিস্টার ব্রেক শেষ হয় ৩ মার্চ। ৩ মার্চ ভর্তি পরীক্ষা সহ ১০ তারিখ পর্যন্ত অনেকগুলো ইভেন্ট ছিলো। তাই বাসা থেকে আসার সময় ছোটো ভাই আসার জন্য বায়না ধরলে সাথে নিয়ে আসি। ভালোই যাচ্ছিলো দিন। সমস্যা হয় ৮ তারিখ রাতে। কালচারাল নাইট ছিলো তাই ছোটো ভাইকে নিয়ে মুক্তমঞ্চে চলে আসি।সবকিছু শুরুতে ঠিক ঠাকই ছিলো। আমরা CSE 22 এর সবাই একসাথে ছিলাম এবং সাথে 21 এর কিছু ভাইয়েরাও ছিলো। একসময় কোনো এক গানের তালে ২২ এর সবাই সহ ২১ এর একজন ভাই ঘাড়ে হাত দিয়ে গোল হয়ে ঘুরতে শুরু করে। দুর্ভাগ্যবশত (সৌভাগ্য বলতাম যদি এর পরের ঘটনাগুলো না ঘটতো) আমি ওই গোল চক্র থেকে বাদ পড়ে যাই। তবুও ঢোকার চেষ্টা করি কিন্তু অনেক দ্রুত ঘুরতেছিলো তাই ঢুকতে পারিনা। ঠিক তার কিছুক্ষণ পরেই তাল হারিয়ে কেন্দ্রবিমুখী বলের কারণে সবাই ছিটকে পড়ে যায়। তখন হাসাহাসি করতে করতে সবাইকে তুলি। ঠিক তখনই সামনের দিক থেকে এক আপু জোর গলায় বলতে থাকে " তোরা কে? কে তোরা? তোদের ব্যাচ কী? বল! না বললে এমন খবর করবো..." তখন এক সিনিয়র ভাই আমাদের পক্ষ থেকে সামনে যায়। আমিও গিয়ে ভাইয়ের পাশেই দাঁড়াই কী হয়েছে দেখার জন্য। তখন ভাইকে জিজ্ঞেস করে যে তুই কে, কোন ব্যাচ, ভাই ২১ ব্যাচ বলায় চিল্লায়ে বলে "তোর পাশের ওরা কোন ব্যাচ?" তারপর আমাদের মধ্যে থেকে একজন বলে ২২ ব্যাচ। তখন ভাই অতি বিনয়ের সাথে জিজ্ঞাসা করে যে আপু কী হয়েছে বলেন। তখন আবার চিল্লায়ে বলা শুরু করে যে ২২ কে ডাক ওদের সাথে কথা আছে।
আমরা সবাই যেহেতু ভাইয়ের সাথেই ছিলাম তাই ভাই বললো যে আমরা এখানেই আছি। তখন আপু বলে যে এভাবে নাচার পারমিশন কে দিয়েছে, এভাবে একটা মেয়েকে ধাক্কা দেওয়ার সাহস হয় কিভাবে। এতোক্ষণে সবার লক্ষ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে আপু। আর আশেপাশে আমাদের যারা ইমিডিয়েট সিনিয়র (CSE) ছিলেন সবাই চলে আসছে। তখন ঐ সিনিয়র ভাই অতি বিনয়ের সাথে আপুকে সরি বলে। কিন্তু আপু এতে খুশি না। এক পর্যায়ে ড. এম. এ রশিদ হল থেকে তার ফ্রেন্ডদের ডেকে আনার হুমকি দেয়(যেটা ছিলো তার ফ্রেন্ড সাহস(BECM 20), ছাত্রলীগের সাথে জড়িত ছিলো, সেই পরবর্তী সব সমস্যার পিছনে দায়ী)। তার ইচ্ছে তাকে কেনো ধাক্কা মারা হয়েছে তা এক্সপ্লেইন করতে হবে। তখন পুরো দায়িত্বটাই CSE 21 এর ভাইয়েরা সামলানোর জন্য দায়ভার নেয় এবং তাঁরা আপুর কাছে বিনয়ের সাথে ক্ষমা চায় এবং আমাদের বলে মাঝে না থেকে একপাশে গিয়ে ইন্জয় করতে। আমরাও সেটাই করি।
ভাইয়েরা সমস্যার সমাধান করে নিবে এই বিষয়ে আশ্বস্ত হয়ে আমরা একপাশে চলে যাই। কিন্তু সমস্যা ওখানে শেষ হয়নি, আপু ২১ এর সাথে কথা বলে খুশি হয়নি তাই আপু ২০ কে ডাকে। তবুও সে শান্ত হয়নি। এক পর্যায়ে এটা যেতে যেতে অনেক দূরে চলে যায়। (পলিটিক্যালি সবকিছু ইনভলভ হয়ে যায়, আপুর ফ্রেন্ড (ড. এম. এ. রশিদ হল এর ছাত্রলীগের সাথে জড়িত (সাহস BECM 20) জানতে পারি) ) ) একসময় আমাদের মধ্যে থেকে দুজন ফ্রেন্ডকে ভাইয়েরা নিয়ে যায় কিছু জিজ্ঞাসা বাদের জন্য।(পরে জানতে পারি সিনিয়র পলিটিক্যাল ভাইয়েরা ওদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে এবং বিভিন্ন রকম হুমকি দিয়েছে এবং ওরা ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে আমার নাম বলে (দুজনেই এম এ রশিদ হলের))
তারপর ২১ এর ভাইয়েরা আমাদের চলে যেতে বলেন। কিন্তু যখন আমরা চলে যেতে চাই তখন দেখি ক্যাম্পাসের সব রাস্তায় আমাদের আটকে রাখার জন্য ভাইয়েরা (অন্য ডিপার্টমেন্টের) দাঁড়ায়ে আছে। আমরা বের হতে চাইলে আমাদের বের হতে দেওয়া হয় না। যখন মেইন গেটের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলাম তখন খাজার পুকুরের সামনে আমাদের কয়েকজন ভাই আটকালো। আমাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে। এক পর্যায়ে আমাদের জিজ্ঞাসা করে যে মুতিউর কে। আমি একটু অবাক হই। যখন আমি আমার পরিচয় দিলাম তখন আমাকে বলে তোর খবর আজ হবে। তারপর আমরা আবার মুক্তমঞ্চে চলে আসি। ঠিক তখনই আমার রোলমেট ভাই সহ আরও কয়েকজন ভাই SWC র গেট দিয়ে ভিতরে আসে। আমরা গেটের ভিতরেই মাঠে কোনায় দাঁড়িয়ে ছিলাম। তখন আমাকে ভাইয়েরা ডাকে, কিন্তু তখন রোলমেট ভাই আমাকে ওদের থেকে নিয়ে বলে "না আমি ওকে ওদের কাছে কোনোভাবেই যেতে দিবো না" আমি তখনো বুঝে উঠিনি আসলে হচ্ছে টা কি?(কিন্তু পরে বুঝেছিলাম ভাই কেনো বলেছিলো এমন কথা, সেদিন বুঝেছিলাম রোলমেটের বন্ডিংটা আসলে কতটা শক্তিশালী, মনে হচ্ছিলো ভাই আমার নিজের ভাই) তখন আরেক ভাই রোলমেট ভাইয়ের সাথে কথা বলে, আর আমি এক ভাইয়ের সাথে দাঁড়িয়ে থাকি। একটু পর ভাই আসে এবং বলে আয়। ছোটো ভাই এতোক্ষণ আমার সাথেই ছিলো, এবার ভাইদের অনুরোধে ছোটো ভাইকে আরেক ভাই(CSE 21) এর সাথে বাসায় পাঠিয়ে দেই। তারপর মুক্তমঞ্চ দিয়ে খাজার পুকুরের পাশে দিয়ে খাজার পুকুর এবং সেন্ট্রাল ফিল্ডের মাঝে রাস্তায় নিয়ে যাওয়া হয়। যাওয়ার সময় ভাই আমাকে শুধু এটাই বোঝাচ্ছিলো যে এখন আমাকে সবকিছুর জন্য প্রিপেয়ার হতে হবে আমার সাথে এখন যে কোনো কিছু হতে পারে। তখনও বুঝতে পারিনি আমার সাথে কী হতে যাচ্ছে .....।
প্রথমে আমাকে ২০ ব্যাচের(অন্য ডিপার্টমেন্টের) কিছু ভাইদের সামনে দিয়ে যাওয়া হয় (এখানে থেকে যারা যারা সামনে আসে তাদের কাউকেই চিনি না আর তাই কাউকেই ভরসা করি না)। আমাকে দাঁড় করানোর সাথে সাথে এক ভাই আমার উপর চিল্লায়ে ওঠেন আমার দাঁড়ানো ঠিক না থাকার কারণে। আমি তাকায়ে দেখি আমার হলের সিনিয়র (Sudipto Sen MSE 20) আমি থতমত খেয়ে ঠিক হয়ে দাঁড়াই। তারপর আমাকে যথারীতি র্যাগিংয়ের নিয়ম অনুযায়ী পরিচয় দিয়ে শুরু হয়। পরিচয় শেষে আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয় কী হয়েছিলো, আমি ঘটনা বলতে শুরু করি, কিন্তু আমার ঘটনা বলা শেষ হয় না। "একজন আপু" না বলে "একটা আপু " বলায় ওখানেই আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। ঠিক তারপর দুজন ভাই আমার দুই হাত শক্ত করে ধরে SWC তে ক্যাফের সামনের গেটের কাছে নিয়ে যায়। একদম সরাসরি ছাত্রলীগ সভাপতি রুদ্রনীল এর সামনে। আমাকে শুরুতেই রুদ্রনীল কঠোর ভাবে জিজ্ঞাসা করে যে আমি ধাক্কা কেনো মেরেছি, আমি অস্বীকার করি, তারপর আমাকে আমার পরিচয় বিস্তারিত জিজ্ঞাসা করে। আমি বলি কিন্তু হোমটাউন জয়পুরহাট বলায় বলে "ও আচ্ছা এজন্যই বোকাচোদা"। (Q1. কেনো ভাই? আমার হোমটাউন নিয়ে আমাকে বোকাচোদা বলার অধিকার আপনাকে কে দিছে?) এরপর রুদ্র আরও দুই তিনবার জিজ্ঞাসা করে, আমি আমার কথায় অনড় থাকি তখন সে আবার জিজ্ঞাসা করে যে তাহলে বল তোর সাথে কে কে ছিলো আমি স্পষ্টভাবে বলতে অসম্মতি জানাই, তখন আমার গালে থাপ্পড় পরে, আমি ভাবলাম শেষ কিন্তু না সবে তো শুরু। এরপর আমাকে আরও দুই তিনটা থাপ্পড় দেয়। তারপর আমাকে দাঁড় করায়, করিয়ে পাশের জনকে বলে যে ওই মেয়েকে(তানজিলা আহমেদ তানজুম(MSE-20)) এর ছবি পাঠাও, জিজ্ঞাসা করো এই ছেলে কি না।(আপু রোকেয়া হলে থাকে) যথারীতি ছবি পাঠানো হয় এবং বলে যে আমিই সেই ছেলে। আমি অবাক তখন। তখন আমার মাথায় আসেনি, কিন্তু পরে আসছে যে আমি যদি ধাক্কা দিয়ে থাকি তবে যখন আমি ভাইয়ের সাথে উনার সামনেই দাঁড়িয়ে ছিলাম তখন তার চোখ কই ছিলো? সে কি তখন দেখেননি? এতোক্ষণ এতো কিছু হলো, ভাবলাম হয়তো ঐ আপুকে ধাক্কা মারা হয়েছে। কিন্তু এবার ছবি দেওয়ার পর পাশে কথা শুনে জানতে পারলাম যে ওই আপুকে ধাক্কা মারা হয়নি, তার কোনো এক ফ্রেন্ডকে মারা হয়েছে আর ঘটনার পর তার ফ্রেন্ডকে মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি তখন ভাবতে শুরু করলাম যে ওখানে থেকে কখন কাকে আবার মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হলো দেখলাম না তো। সবাই পড়ে যাওয়ার পরপরই তো আপু চিল্লানো শুরু করেছিলো, এই সময়ের মধ্যে এমন কিছুই দেখিনি।
এসব ভাবতেছি তার মধ্যেই রুদ্রনীল আবার একই কথা জিজ্ঞাসা করতে লাগলো এরপর আমি শুধু একবার বলেছি আমি করিনি তারপর থেকে ১০-১২ টা থাপ্পড় আমাকে মারে, মারতে মারতে যখন দেয়ালের কাছাকাছি তখন আমাকে উল্টায়ে পিঠে হাতের কনুই দিয়ে কিল ঘুষি মারতে থাকে। ৮-১০ টা কিল ঘুষি খাওয়ার পর রুদ্রকে আটকায় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নিবির রেজা। এতোক্ষণ মার খেয়ে আমার শরীর অবশ হয়ে গেছে। নিবির আমার সামনে এসে শান্ত করে জিজ্ঞাসা করলো যে কে কে ছিলো আমার সাথে (এবার আর আমি করছি এটা না, কারা ছিলো সেটা, কারণ তাদের মারতে হবে যে, তুই শোধ নিতে হবে তো। একটা মেয়ে বলেছে বলে কথা।) চেহারা দেখে ভাবি হয়তো একে বুঝায়ে বললে বুঝবে কিন্তু একবার বোঝালাম তারপর আবার জিজ্ঞাসা করে যখন একই উত্তর পায় তখন আমাকে ওখানেই একটা চেয়ারে বসায়ে থাপ্পড় আর ঘুষি মারতে থাকে। আমার শরীর অবশ আমি তেমন কিছু ফিল করতে পারতেছিলাম না, কান দিয়ে কিছু ঢুকেতেছিলো না কারণ থাপ্পরগুলো কানের উপরও পড়তেছিলো। ঠিক কতক্ষণ পর জানা নেই আমার মনে হলো মাইর থামছে, এতোক্ষণ আমার কোনো কথা শোনা হয়নি শুধু মারা হয়েছে। এরপর রুদ্র বলে যে ওকে নিয়ে ওই মেয়ের কাছে চলো আর ওই মেয়েকে হল থেকে নিচে নামতে বলো। তারপর আমাকে SWC থেকে বের করে রোকেয়া হলের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি এতোক্ষণ ভাবছি তেমন মানুষ নেই হয়তো ৫০-৬০ জন হবে। কিন্তু যখন রোকেয়া হলের দিকে গেলাম তখন সাথে গেলো ১৫০-২০০ মানুষ । রাস্তায় যাওয়ার সময় পুরো রাস্তা আমাকে রুদ্র এটাই বলে যে এখনো স্বীকার কর অথবা কারো নাম বলে দে, যদি ওই মেয়ে আইডেন্টিফাই করে তবে কিন্তু তোর কপালে দুঃখ আছে, আজকে রাতে তোকে মারা হবে সারারাত, তারপর সকালে পুলিশে দেওয়া হবে, ইউনিভার্সিটি থেকে বহিস্কার করা হবে। কিন্তু আমি জানি আমি কিছু করিনি আর এখন ওই মেয়েও যদি বলে আমি করছি তো আমি বলবো সেই মিথ্যাবাদী। এবং কিছুক্ষণ পরেই ওটাই মনে হলো। রোকেয়া হলের সামনে নিয়ে যাওয়া হলো, হলের বোধহয় অর্ধেক মেয়েই নেমে আসছিলো। তখন ওই মেয়ে বলে আমিই সেই ছেলে, তখন আমি ভালোভাবে জানার চেষ্টা করি কী হয়েছিলো আর আমি করিনি তাও বোঝানোর চেষ্টা করি। কিন্তু ওই আপু শুধু একটা কথায় বলে যে প্রভোস্ট রাগ করবে প্লিজ আপনারা যান আর ওকে কিছু করিয়েন না। কিন্তু আমি কী বলি তার দিকে কোনো মনই নাই। তখন আমার কথা শেষ না করেই রুদ্র আমাকে নিয়ে আসে।
রোকেয়া হল থেকে SWC আসা পর্যন্ত আমাকে এটা বলে হুমকি দেয় যে SWC র সিঁড়ি দিয়ে ওঠার আগে সব স্বীকার কর নাহলে বল কে করছে কারা ছিলো তোর সাথে। কিন্তু আমি স্বীকার করিনা এবং কিছু বলি ও না। তারপর সিঁড়ি দিয়ে উঠেই শুরু হয় মাইর যেখানে পাচ্ছে মারতেছে। মারতে মারতে আমাকে কফি শপের পাশের রুমটাতে ঢোকায়। কিন্তু এইসময় আমার মস্তবড় একটা ক্ষতি হয়ে যায়, আমার কানে এবার খুব ভালোভাবেই লাগে, কানে তখন শুধু শো শো শুনি আর কথা খুব ধীরে, কান থেকে পানি পড়তেছিলো তবুও চোখ দিয়ে পড়েনি (এর ফল আমি আজও ভোগ করি, কানে মাঝেমধ্যেই পচন দেখা দেয়, এক কানে কম শুনি, এখন কান থেকে রস বের হয়ে কানের উপরেও ঘা জাতীয় কিছু হয়েছে যা ভালো হয় না) কফি শপের পাশে রুমের ভিতরে দেখি লাঠি সোটা সহ অনেক কিছুই আছে। তারপর একটা চেয়ার বসায়ে মুখের সামনে স্ট্যাম্প ধরে জিজ্ঞাসা করে "বল কে কে ছিলো তোর সাথে, বললেই ছেঁড়ে দিবো" (Q2. একটা মেয়ে একটা ছেলের নামে কিভাবে মিথ্যা অপবাদ দিলো? আর সেই অপবাদের ভিত্তিতে কোনোরূপ কোনো তদন্ত ছাড়াই মিথ্যা অপবাদে এতোক্ষণ ধরে অত্যাচার করা হলো।) এরপরও যখন আমি বলিনা তখন আমাকে স্ট্যাম্প দিয়ে মারতে উদ্যত হয়। তখন বাকি যারা ছিলো তারা এসে আটকায়, এরপর পর্যায়ক্রমে সবাই এসে আমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে থাকে যে যারা ছিলো তাদের নাম বলতে। কিন্তু তখন আমি আর কোনো উত্তর দেইনি, সে সময় টর্চার সাময়িক স্থগিত ছিলো। এমন সময় আমার ফোনে ফ্রেন্ডদের মেসেজের নোটিফিকেশ আসে যে আমাকে জিজ্ঞাসা করে কী হয়েছে। তখন যে বাসায় বসে থাকার জন্য কিছুই জানে না তাকেও ফোন করা হয় ক্যাম্পাসে আসার জন্য। এর মধ্যে এক ফ্রেন্ড গ্রুপে মেসেজ দেয় যাতে কেউ ফোন রিসিভ না করে কিন্তু এই মেসেজ ভাইয়েরা দেখে ফেলে তারপর ওকেও ফোন দেওয়া হয় এবং অবশেষে তাকে বাড়ি থেকে তুলে আনা হয়, এবং তাকেও আলাদা ভাবে অত্যাচার করে
1.Labib Redwan (CE '18 ও অমর একুশে হলের সহকারী সমন্বয়ক, যে ওকে প্রথমে call করে )
২. Omar Faruk Hridoy( CE' 18 ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সহকারী সমন্বয়ক)
৩.মুশতাক শাহরিয়ার(URP '18)
সহ আরও নাম না জানা অনেকে)। এরপর আলিফ ভাই আমার সামনে আসে (ইইই ১৮) ভাই বগুড়ার এবং অমর একুশে হলের। আমাকে এবার ব্যতিক্রমী প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা হয়। "তুই কোন হলের?" সেদিন সরাসরি অমর একুশে হল বলি। তখন বলে তুই পলিটিক্যাল না? আমি বলি হ্যাঁ (এখন কে কি ভাববেন জানিনা কিন্তু ক্যাম্পাসে গিয়ে অনিচ্ছা সত্ত্বেও পলিটিক্স করছি, এখন পর্যন্ত কোনো সুবিধা নেইনি(হলে ফিস্টে লাইন ছাড়া ঢুকছি একবার)) তখন আমাকে ভাই বলে "তুই তোর হলের ভাইদের দেখছিস না? ভাইদের বলিসনাই কেনো একবারও?" আমি তখনও হলের ভাইদের তেমন কাউকে চিনতাম না। কিন্তু নাহিদ ভাই (সর্বশেষ সহ সভাপতি, অমর একুশে হল) মুসতাক ভাই(১৮) কে চিনতাম বগুড়া জয়পুরহাট অ্যাসোসিয়েশনের জন্য। (Q3. আচ্ছা আমি নাহয় চিনতাম তবুও আমার উপর অত্যাচারের স্টিম রোলার কিন্তু যারা চিনতো না তাদের কী হবে? তাদের কি তাহলে এভাবে মাইর খেয়ে মৃত্যুর কোলে ধলে পড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে?) এরপর আরও কয়েকজন হলের ভাই আসে। এসে বলে যে আমরা ভাবছি তুই ফজলুলের। আমার প্রশ্ন হলো ভাই আমি ফজলুলের যদি হইও তাহলে কি এমনে কোনো কারণ ছাড়া মরতে পাঠাবেন? ফজলুলের যারা তারা কি ছাত্র না? তারপর আমাকে বলে যে নিবিরকে কেনো আমি বলিনি যে আমি পলিটিক্যাল? (Q4. কেনো ভাই? পলিটিক্যাল হলে মাফ আর সাধারণ শিক্ষার্থী হলে মার?)
এরপর আমাকে কানের অজুহাত দেখিয়ে ভাইয়েরা মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে। তারপর আলিফ ভাই এবং আরও তিনজন ভাই আমাকে মেডিকেল সেন্টারে নিয়ে যায়। এরই মধ্যে চারটা বেজে গেছে। যখন আপুর সাথে সমস্যা শুরু হয় তখন ১১ টা বাজতো। মেডিকেল সেন্টারে ডাক্তার দেখেই বুঝে গেছিলো কী হয়েছে। যিনি দায়িত্বে ছিলেন উনি চলে যাচ্ছিলেন কারণ তার ডিউটি শেষ তবুও আমাকে দেখে আবার বসলেন। তারপর কান দেখে বললো কানে কী হয়েছে, অপারেশন করতে হবে। তবুও কিছু ঔষধ লিখে দিলো ওগুলো নিয়ে হলে নিয়ে যাওয়া হলো (হলে কোনো কিছু করা হয়নি, যা হয়েছে সবার সামনেই করছে)। তারপর আলিফ ভাইয়ের রুমে (৩০৪ পূর্ব) যাই।
৩০ মিনিট পর সাধারণ সম্পাদক নিবিড় আসে। এসে কিছু কথা বলে যা শুনে হাসি বের হচ্ছিলো। যার মধ্যে অন্যতম হলো "তুই আমার আন্ডারে পলিটিক্স করিস তুই আমাকে বলবি না? যখন জানলাম তখন আর দাদাকে মারতে না দিয়ে নিজেই মারলাম"। (Q5. ভাই আপনারা এটা তখন জানতে পারেন যখন রোকেয়া হল থেকে ঘুরে আসি। আর মারার সাথে আমার পলিটিক্যালের কী সম্পর্ক? যারা পলিটিক্স করে না তারা কি অমানুষ? ওদের অমানুষের মতো পিটাবেন?)পরের দিন সকালে ক্যাফেতে বসে ওই আপুকে সরি বলি। এরপর আসি আপুর বিষয়ে, আপু আপনি আমার নামে যে অভিযোগ দিয়েছেন তা আমি সরাসরি তখনই অস্বীকার করেছি। তবুও এখন কিছু বলি। আমি যদি এই কাজ করেই থাকি তবে ঢাক্কা মারার পরে কেনো আমাকে সরাসরি বলা হলো না যে ঢাক্কা মেরেছি, কেনো সিনিয়র সহ সকল ব্যাচমেটকে জিজ্ঞাসা করলেন আমরা কারা। যদি আপনি আমাকে দেখেই থাকেন তাহলে কেনো আমার দুইটা বন্ধুকে ডাকা হলো আমার নাম শুনতে? আর আপনি ওদের কীভাবে বোঝালেন যে ওটা আমি? আমরা তো ১০-১২ জন ছিলাম। সবাইকে ডেকে নিজেই আইডেন্টিফাই করতেন। তা না করে কেনো দুজনকে ডাকা হলো তারপর তারা যা বললো তাতেই হাঁ মিলালেন? আর আপনার ফ্রেন্ডকে ঢাক্কা মেরেছিলাম তো আপনাকে কেনো সরি বলেছি? যখন সরি বলেছিলাম তখন আপনার ফ্রেন্ড কেনো আপনার সাথে ছিলো না? সর্বশেষ একটাই প্রশ্ন আমি ঢাক্কা মেরেছি তা আপনি কোন হিসেবে বলেছিলেন? আর আপনার কথার মধ্যে কেনো আপনার ফ্রেন্ড কোন হলে কী করে না করে সেটা আসছিলো? কোনো তদন্ত ছাড়া অযৌক্তিকভাবে ছাত্রলীগের ক্যাডারদের দ্বারা আমাকে মানসিক এবং শারীরিক নির্যাতনের সুষ্ঠু বিচার চাই।
মুতিউর রহমান CSE-22