IEB (Institute of Engineers, Bangladesh) গতকাল ০১/০৩/২০২৫ তারিখে কুয়েটের ইস্যুতে মানববন্ধন করেন। মানববন্ধনে প্রেসের সামনে তারা বিভিন্ন ভাবে ছাত্রদল কর্তৃক কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীর উপর হামলাকে জাস্টিফাই করার চেষ্টা করে। এইরকম নৃশংসহামলা কুয়েটের ইতিহাসে এর আগে কখনই হয়নি। IEB এর দেওয়া এ ধরণের বিবৃতিকে আমরা নিন্দা জানাই।
প্রথমত, IEB এর ঢাকা কেন্দ্রের ভাইস চেয়ারম্যান প্রকৌশল আব্দুল আল মামুন তার এক বক্তব্যে স্পষ্টভাবে বলেছেন, ছাত্রদল সেখানে ফর্ম বিতরণ করতে গিয়েছিলো। ফর্ম বিতরণ করা কি কোনো অপরাধ?
এই ব্যাপারে আমাদের বক্তব্য স্পষ্ট। কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এইখানে তাহলে ফর্ম বিতরণ করাতো ছাত্ররাজনীতির অনুপ্রবেশ করানোর অপচেষ্টা। তাদের ছাত্রদল কতৃক এই অপচেষ্টাকে স্বাভাবিকীকরণ করার চেষ্টা করাকে আমরা নিন্দা জানাচ্ছি। এই বক্তব্য প্রমাণ করে তারা কুয়েটের প্রাতিষ্ঠানিক নিয়মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়।
দ্বিতীয়ত, তিনি আরো বলেন যে ছাত্রদলের উপর হামলা করে গুপ্ত সংগঠন ও ফ্যাসিবাদের দোসররা।
এই ব্যাপারে আমরা বলতে চাই যে, আমাদের সেন্টিমেন্টকে নিয়ে ট্যাগিং এর রাজনীতি চালাবেন না। এই ধরণের ট্যাগিং আমরা ফ্যাসিবাদদের করতে দেখেছি। আপনারা ঘটনাকে ট্যাগিং করে অন্যদিকে মোড় নেওয়ার চেষ্টা উলটো আপনাদের উদ্দেশ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। ১৭ ফেব্রুয়ারী ছাত্রদল কুয়েটে এসে ফর্ম বিতরণের প্রতিবাদে, ১৮ ফেব্রুয়ারী প্রতিবাদ স্বরূপ সাধারণ শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে ভিসি স্যারের কাছে যাবার সময় - ছাত্রদের ফর্ম উত্তরণকৃত শিক্ষার্থীরা মিছিলের সামনে দিয়ে হাত তালি দেয় এবং অশ্রাব্য ভাষায় গালি দেয়। এক পর্যায়ে তারা হাতাহাতি জড়ালেও সকলে মিলে ফর্ম উত্তরণকৃত ছাত্রদের নিরাপদে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেয়। পরবর্তীতে কুয়েট ছাত্রদল, খুলনা ছাত্রদল ও খুলনা যুবদলের ক্যাডাররা পকেট গেটের বাইরে এসে মাইকে স্লোগান দিয়ে উস্কানি দিতে থাকে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা উস্কানির কোনো জবাব না দিলে এক পর্যায়ে তারা ইট, দা, ছুরি, রামদা এমন কি বন্দুক নিয়ে হামলা শুরু করে। সাধারণ ছাত্ররা নিরস্ত্র অবস্থায় নিজেদের সুরক্ষা দিতে চেয়েছে কেবল। আর ২ ঘন্টার বেশি সময় ধরে ঘটে যাওয়া হামলায় দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছে। কখনোই আগে ছাত্রদলের কোনো হামলা করা হয়নি এবং এখানে কোনো গুপ্তসংগঠন অথবা ফ্যাসিবাদের দোসড় ছিলো না। যারা রক্তাক্ত হয়েছে, যারা নিজেদের, নিজের ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে; সবাই সাধরণ শিক্ষার্থী। ফ্যাসিস্ট সরকারের দেখানো পথে হেটে, অন্যায়ের সাথে হাত মিলিয়ে প্রমাণবিহীন ট্যাগিং করে, নিকৃষ্ট রাজনীতি আমাদের সাথে খেলবেন না। IEB কতৃক এরূপ প্রমাণবিহীন মিথ্যাচারের আমরা তীব্র প্রতিবাদ জানাই।
তৃতীয়ত, তিনি এরপর সংযুক্ত করেন যে ভিসি স্যারের উপর লাঞ্চনার বিচার করার জন্য।
একবারো তিনি ছাত্রদলের কারো বিচার না চেয়ে এবং কুয়েট প্রশাসন কেন ব্যর্থ হয়েছে সে নিয়ে প্রশ্ন না করায় কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে শঙ্কিত। মাসুদ স্যারের লাঞ্চনার কথা বল্লেও, দেড়শতাধিক শিক্ষার্থীর রক্তঝড়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে IEB এর কোনো অবস্থান নেই। রক্তাক্ত কুয়েটের দৃশ্য সারাদেশবাসী দেখেছেন, প্রমাণ সবার সামনেই আছে। কিন্তু আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা যেখানে বারবার বলে যাচ্ছি মাসুদ স্যারকে কোনো লাঞ্চনা করা হয়নি এবং এটি কেবলমাত্র একটি মিথ্যাচার দিয়ে সকলের দৃষ্টি অন্য দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা ছাড়া আর কিছুনয়। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা রক্তাক্ত হয়েছি, রক্তাক্ত অবস্থায় মাসুদ স্যারকে হিউম্যান শিল্ড দিয়েছি, কোনো ভাবেই ওনার গায়ে একটি ফুলের টোকা আসতে দেই নি। আবারো আপনাদের বলছি, মিথ্যাচার করবেন না। আমরা নিজেদের উপর হয়ে যাওয়া নির্মম হামলার পরিপ্রেক্ষিতে এমন অবস্থান নিয়েছি।
পরিশেষেবলতে চাই, IEB এর এ ধরণের বক্তব্যে কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা ব্যথিত। আমরা বিশ্বাস করি IEB এর মতো একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান তাদের বক্তব্য দেওয়ার সময় এ ধরণের জঘন্য মিথ্যাচার করবে না। আমরা আপনাদের ছোট ভাইয়ের মতো, ন্যায্য দাবীর এই সংগ্রামে আপনারা আমাদের পাশে এসে দাড়ান।
এছাড়াও পাঁচ হাজার শিক্ষার্থীর সাইন করা ভিসি অপসারণের জন্য স্মারকলিপি জমা দেওয়াকে ভিসি বিরোধী ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করলো IEB. এর আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে হামলাকারীদের সাথে জড়িত শিক্ষার্থীদের সংগঠনের, Voice of KUET (যেই সংগঠনের নাম ব্যবহার করেকুয়েট ছাত্রদল ক্যাম্পাসে বিভিন্ন কার্যক্রম চালাচ্ছিলো) সাথে IEB এর কর্মচারীদের মিটিংকরতে দেখা যায়। এমনকি এই মিটিং এ ভিসি স্যার নিজেও যোগদান করার ছবিও সামাজিকযোগাযোগ মাধ্যমে পাওয়া যায়। এর সাথে এমতাবস্থায় আমাদের অনুরোধ হামলাকারীদের সাথে যারা পূর্বে মিটিং করেছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে যথোপোযুক্ত শাস্তির আওতায় আনা হোক।
সকল শিক্ষার্থীবৃন্দ
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়